ভারতবর্ষে বাণিজ্য বিস্তারের লক্ষ্যে (১৬০০ সালে) The British East India Company ইংল্যান্ডে স্থাপিত হয়। Dutch East India Company ( ১৬০২ সালে)। ১৬১৬ সালে বাংলায় প্রবেশ করলেও ব্রিটিশদের সাথে টিকে থাকতে না পেরে কিছুকাল পরে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার দিকে চলে যায়। ফরাসিরা French East India Company প্রতিষ্ঠা করে (১৬৬৪ সালে) বাংলায় প্রবেশ করে তবে ইংরেজদের সাথে তিন দফা যুদ্ধে হেরে তারাও প্রায় একশ বছরের বাণিজ্য গুটিয়ে ইন্দোচীনের দিকে চলে যায়।
১৯৪৮ সালে ইউরোপের যুদ্ধরত বিভিন্ন দেশের মধ্যে ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তি (Thirty Years War) সমাপ্তি ঘটে এই শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। এটি সম্পাদিত হওয়ার পর শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে ইউরোপীয় বিভিন্ন জাতি নতুন উদ্যমে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। এদের অধিকাংশের লক্ষ্য ছিল প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ ভারতবর্ষ (জম্বুদ্বীপ)|
ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কার (১৪৮৭ সালে) পর্তুগিজরা। ১৪৮৭ সালে বার্ণলোমিউ দিয়াজ উত্তমাশা অন্তরীপে পৌঁছান। ভাস্কো দা গামা আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত উত্তমাশা অন্তরীপ (Cape of Good hope) হয়ে ১৪৯৮ সালে ভারতবর্ষে আসেন ভাস্কো দা গামা। ভারতে আসতে ভাস্কো দা গামা আরব নাবিকদের সাহায্য নেন। তিনি কালিকট বন্দরে পৌঁছান। পর্তুগিজ জলদস্যুদের বলা হত- হার্মাদ। ভারতে পর্তুগিজদের প্রথম গভর্নর ছিলেন- আলবুকার্ক। ইউরোপীয়দের মধ্যে পর্তুগিজরা প্রথম ভারতে আসে ও ঘাঁটি স্থাপন ১৫১৬ সালে। ভারতে পর্তুগিজ বা ইউরোপীয়দের প্রথম দুর্গ ছিল কোচিনা। তারা বাংলায় 'ফিরিঙ্গি' নামে পরিচিত ছিল।
ওলন্দাজরা বাংলায় আসে ১৬০২ সালে। নেদারল্যান্ড বা হল্যান্ডের অধিবাসীদের বলা হয় ওলন্দাজ বা ডাচ । উপমহাদেশে তাদের বণিকদের মসলার শ্রেষ্ঠ ব্যবসা গড়ে তোলে। পরবর্তীতে তারা ইন্দোনেশিয়াতে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল।
কলকাতা নগরীর প্রতিষ্ঠাতা জব চার্নক। ব্যবসার উদ্দেশ্যে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন করে ১৬০০ সালে। বাংলায় ইংরেজরা প্রথম কুঠি স্থাপন করেন ১৬০২ সালে পিপিলাই (উরিষ্যা)। ইংরেজরা কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণ করেন ১৭০০ সালে। ফররুখশিয়া কোম্পানিকে বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার দেন ১৭১৭ সালে। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানী লাভ করেন ১৭৬৫ সালে দ্বিতীয় শাহ আলমের সময়ে, মাত্র বাৎসরিক ২৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে।
ডেনমার্কের অধিবাসীদের বলা হয় ডেনিশ বা দিনেমার। ডেনিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন করে ১৬১৬ সালে। দিনেমাররা তাদের বানিজ্যকুঠি বিক্রি করে দেন ইংরেজদের কাছে।
ইউরোপীয়দের মধ্যে ফরাসিরা সবার শেষে আসে ১৬৬৮ সালে। ফরাসিরা সর্বপ্রথম ভারতে বাণিজ্য কুঠির স্থাপন করে- সুরাটে। ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৬৬৪ সালে । ফরাসিরা শ্রেষ্ঠ ফ্যাক্টরি/কুঠি নির্মাণ করে চন্দন নগরে। ইংরেজরা চন্দন নগর কুঠি দখল করে ১৭৫৭ সালে । পুণ্ডিচেরী নামক ফরাসি উপনিবেশটি স্থাপন করে ফ্রাঁসোয়া মার্টিন।
রবার্ট ক্লাইভ ছিলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাপতি এবং ব্রিটিশ উপনিবেশবাদী। তিনি ভারত উপমহাদেশে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের সূচনা করেন। তার উপাধি ছিল পলাশীর প্রথম ব্যারন। পলাশীর যুদ্ধে তার নেতৃত্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাদল বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈন্যদলকে পরাজিত করে।
রবার্ট ক্লাইভ উপমহাদেশের প্রথম ইংরেজ গভর্নর। ক্লাইভ দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের সাথে এলাহাবাদে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। বাৎসরিক মাত্র ২৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দেওয়ানি প্রদান করেন। এই চুক্তির ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে।
দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের নিকট দেওয়ানি লাভের পর বাংলার নবাবী শাসন ধূলিসাৎ হয়।
নবাবকে বৃত্তিভোগীতে পরিণত করে রবার্ট ক্লাইভ দ্বৈত শাসন প্রবর্তন করেন ১৭৬৫ সালে।
দ্বৈত শাসন ব্যবস্থায় বাংলার নবাবের উপর শাসন ও বিচার বিভাগের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।
ক্লাইভ রাজস্ব আদায় ও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত করেন কোম্পানির উপর।
দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার মারাত্মক পরিণতি হল ছিয়াত্তরের মন্বস্তর।
ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় বাংলার গভর্নর ছিলেন লর্ড কার্টিয়ার।
ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের (১১৭৬ বঙ্গাব্দ) বা ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দঃ
দ্বৈত শাসনের আওতায় রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পেয়ে ইংরেজরা প্রজাদের উপর অতিরিক্ত কর আদারে অত্যাচার শুরু করে। অতিরিক্ত করের চাপে যখন জনগণ ও কৃষকের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা একই সময়ে তিন বছর অনাবৃষ্টির ফলে খরায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। নেমে আসে দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাস। দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ লোক অনাহারে মারা গেলেও কোম্পানি করের বোঝা কমানোর কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এই দুর্ভিক্ষে বাংলার প্রায় এক তৃতীয়াংশ (এক কোটি) লোকের মৃত্যু হয়। ইতিহাসে এটি ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত।
দ্বৈত শাসন ব্যবস্থায় ইংরেজ কোম্পানির অত্যাচার নিপীড়নের বিভিন্ন দিক ব্রিটিশ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলে ইংল্যান্ডে দ্বৈত শাসনের বিরুদ্ধে তুমুল তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। এজন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সুপারিশক্রমে ভারত শাসন সংক্রান্ত রেগুলেটিং অ্যাক্ট, ১৭৭৩ কার্যকর করা হয়। এর ফলে কোম্পানির গভর্নরের পদ গভর্নর জেনারেল পদে উন্নীত হয় ।
তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ(১৯৪৩)/পঞ্চাশের মন্বন্তর(১৩৫০) এর সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উইনস্টন চার্চিল। ১৯৪০ সালের ঘূর্ণিঝড় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান ১৯৪২ সালে বার্মা (মায়ানমার) দখল করলে চাল আমদানির পথ বন্ধ হয়ে যায়।
সমসাময়ীক গ্রন্থঃ মধুশ্রী মুখোপাধ্যায়ের Churchill's Secret War, বিভূতিভূণের উপন্যাসঃ "অসনি সংকেত'। চলচিত্রঃ সত্যজিৎ রায়ের 'অসনি সংকেত' (১৯৭৩), মৃণাল সেনের 'আকালের সন্ধানে' (১৯৭০)। চিত্রকর্মঃ জয়নুল আবেদীনের 'ম্যাডোনা-৪৩'।
১৯০৩ সালের ব্রিটিশ সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ আইন কার্যকর হয়। বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি রাজাকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। একটি পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ এবং অন্যটি পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ ।
১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ রদের মাধ্যমে পূর্ব বাংলার মুসলিম সমাজের স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ায় ১৯১২ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। ভাইসরয়ের সাথে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, এ. কে. ফজলুল হক ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এ অঞ্চলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। ১৯১২ সালের ২৭শে মে গঠিত হয় ব্যারিস্টার রবার্ট নাথানের নেতৃত্বে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট ঢাকা ইউনিভার্সিটি কমিটি যেটি পরিচিতি পায় নাথান কমিশন' নামে। ১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় নাথান কমিটির ইতিবাচক রিপোর্ট । ১৯২১ সালের ১লা জুলাই কলা, বিজ্ঞান ও আইন এই ৩ অনুষদ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু করে লর্ড রিডিং এর আমলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন স্যার জে. হার্টজ।
লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ সালে (২৩ মার্চ) বাংলায় চিরস্থায়ী ভূমি ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।